সিয়াম বা রোজা রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি আ’মাল। এতে একদিকে যেমন মানসিক আত্মশুদ্ধি অর্জন ও কুপ্রবৃত্তি দমন হয় তেমনি শারিরীক দিক দিয়েও রোজা অনেক উপকার বয়ে আনে। জাপানিজ বিজ্ঞানি Yoshinori Ohsumi ২০১৬ সালে ‘অটোফেজি’র উপর গবেষণা করে চিকিৎসা বিজ্ঞানে নোবেল পুরষ্কার পান। এককথায় অটোফেজি হলো দীর্ঘসময় না খেয়ে থাকার মাধ্যমে অর্জিত সেই শরীরবৃত্তীয় অবস্থা যখন শরীরের কোষগুলো তাদের অভ্যন্তরীণ ক্ষতিগ্রস্ত কোষ, প্রোটিন, বিষ ভক্ষণের মাধ্যমে শরীরকে ঝরঝরে ও প্রাণবন্ত করে গড়ে তোলে। মুসলমানেরা এই অটোফেজির চর্চা করে আসছে রোজার মাধ্যমে সেই ১৪০০ বছর ধরে। ইসলামে রোজা রাখাকে খুবই উৎসাহিত করা হয়েছে। রমাদ্বানে পুরো একমাস ফরজ রোজার পাশাপাশি বছর জুড়ে রয়েছে নফল রোজার অনেকগুলো স্কিম। আসুন সংক্ষেপে সেই নফল রোজার স্কিমগুলো দেখে নেইঃ
১. শাওয়াল মাসের ছয় রোজা। এ প্রসঙ্গে রাসূল (সা,) বলেন, ‘যে ব্যক্তি রমজানের রোজা রাখার পরপর শাওয়াল মাসে ছয়টি রোজা রাখবে, সে যেন পুরো বছর রোজা রাখল।’ (মুসলিম)
২. প্রতি মাসে তিনটি রোজা। প্রতি আরবি মাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখের রোজাকে হাদিসে সারা বছর সিয়াম পালনের সমতুল্য বলা হয়েছে। (আবু দাউদ)
আবু হুরায়রাহ (রা.) বলেন, আমার বন্ধু মুহাম্মদ (সা.) আমাকে তিনটি আমলের উপদেশ দিয়েছেন_ ক. প্রতি মাসে তিনটি রোজা; খ. দুই রাকাত সালাতুদ্দোহা বা চাশতের নামাজ এবং গ. রাতে ঘুমানোর পূর্বে বিতর নামাজ পড়া। (বুখারি ও মুসলিম)
৩. প্রতি সোম ও বৃহস্পতিবারের রোজা। রাসূল (সা.) বলেন, সোম ও বৃহস্পতিবার আমলগুলো উপস্থাপন করা হয়। আমি চাই আমার আমল সিয়াম পালন অবস্থায় উপস্থাপন করা হোক। (তিরমিজি)
৪. আরাফার দিবসের রোজা। এ দিবসে রোজা রাখার ব্যাপারে রাসূলকে (সা.) প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, এটা তো আগের ও পরের দুই বছরের পাপ মুছে দেয়। (মুসলিম)
৫. আশুরার রোজা। মহররমের ১০ তারিখকে আশুরা বলা হয়। হাদিসে এসেছে, এই দিন রোজা রাখলে পূর্বের এক বছরের পাপ মোচন হয়। (মুসলিম) কিন্তু ইহুদিরা একই দিনে রোজা পালন করত বিধায় সাহাবারা এই দিন রোজা রাখার ব্যাপারে আপত্তি জানালে রাসূল (সা.) বললেন, আমি যদি আগামী বছর বেঁচে থাকি, তাহলে মহররমের ৯ তারিখেও রোজা রাখব। (মুসলিম) সুতরাং মহররমের ৯ ও ১০ উভয় তারিখেই রোজা উচিত, যেন ইহুদিদের সঙ্গে সাদৃশ্য না থাকে।
৬. একদিন পরপর রোজা রাখা। দাউদের (আ.) নিয়ম ছিল, তিনি একদিন পরপর রোজা রাখতেন। হাদিসে এসেছে, আল্লাহর কাছে (নফল) রোজাগুলোর মধ্যে এই নিয়মে রাখা রোজাই শ্রেষ্ঠ রোজা। (বুখারি ও মুসলিম)
৭. জিলহজ মাসের প্রথম ৯ দিনের রোজা। হাদিসের ভাষ্য, জিলহজ মাসের প্রথম ১০ দিনের আমলের চেয়ে অন্য কোনো আমলই আল্লাহর কাছে এত বেশি প্রিয় নয়। (আবু দাউদ) সে হিসেবে এ মাসের প্রথম ৯ দিন সিয়াম পালনের ফজিলত অনেক। উল্লেখ্য, এ মাসের ১০ তারিখ যেহেতু ঈদুল আজহা, সেহেতু এ দিন রোজা রাখা হারাম। আর এ মাসের ৯ তারিখই হলো আরাফার দিন।
৮. শা’বান মাসের রোজা। হাদিসে এসেছে- রাসূল (সা.) রমজানের পর শা’বান মাসেই বেশি সিয়াম পালন করতেন।
৯. অবিবাহিতদের রোজা। রাসূল (সা.) বলেন, যাদের বিয়ে করার সামর্থ্য আছে, তারা যেন বিয়ে করে। কেননা, বিয়ে চক্ষুকে নিম্নগামী রাখতে এবং লজ্জাস্থানকে হেফাজতে রাখতে অধিক সহায়ক। কিন্তু যারা বিয়ের (আর্থিক) সামর্থ্য রাখে না, তারা যেন সিয়াম পালন করে। কেননা, সিয়াম হলো (পাপ থেকে বাঁচার) ঢালস্বরূপ। (বুখারী)
আজকে সোমবার থেকে নিয়ে আগামী বৃহস্পতিবার পর্যন্ত টানা চারটা রোজা রাখলে আমরা একই সাথে সাপ্তাহিক দুটি রোজা এবং মাসিক তিনটি রোজা অর্থাৎ শা’বান মাসের ১৩,১৪,১৫ তারিখ রোজা রাখার সৌভাগ্য অর্জন করবো। উপরের আলোচনা থেকে আমরা ইতোমধ্যে জেনেছি রমাদ্বান বাদে এই শা’বান মাসেই নবীজি (সা.) সবচেয়ে বেশী রোজা রাখতেন। তাই আসুন রমাদ্বান আসার পূর্বেই এই রোজাগুলো পালনের মাধ্যমে আমরা রমাদ্বানের জন্য প্রস্তুত হই এবং আল্লাহর প্রিয় বান্দা হওয়ার জন্য সচেষ্ট হই। মহান আল্লাহ আমাদের এই রোজাগুলো রাখার মতো মানসিক ও শারিরীক শক্তি দান করুন। আমিন।