Categories
রিভিউ

সুজন ভাইয়ের মধু

সেদিন জিমে ব্যায়াম করছিলাম। হঠাৎ হই-হট্টগোল শুনে দেখি আমাদের ইন্সট্রাক্টর স্বপন ভাই একটা ভিডিও দেখছেন। ভিডিওর গলাটা পরিচিত মনে হওয়াতে এগিয়ে যেতেই স্বপন ভাই বললেন, ‘দেখেন দেখেন কিভাবে সুন্দরবনের মধু সংগ্রহ করে’। যা ধারণা করেছিলাম তাই, তাসমানের Lutfar Rahman Sujon ভাই এর ভিডিও। ওনার ভিডিও পপুলার, তাই বলে এতো পপুলার জানতাম না। আননোন একটা পেজ থেকে ওনার ভিডিও কপি করে আপলোড করেছে, সেখানেও হাজার হাজার ভিউ। আমিও স্বপন ভাইয়ের সামনে খুব পার্ট নিয়ে বললাম, আরেহ, উনিতো আমার খুব কাছের লোক। স্বপন ভাই বললেন, এই মধু কি ভালো হবে? বললাম উনি যেমন লোক খারাপ হবার প্রশ্নই আসে না। তারপর অনুরোধ, আমাকে এই মধু এনে দেন না। আমিও সওয়াব কামানোর সুযোগ হাতছাড়া করলাম না।

সুন্দরবনের এই অসাধারণ মধু নিজে না চেখে আরেকজনকে দিয়ে দিবো, ভাবতেই কষ্ট লাগছিলো। কিন্তু সুজন ভাইও চালাক মানুষ। উনিও সওয়াব কামানোর সুযোগ হাতছাড়া করেন নি। আমার জন্য পাঠিয়ে দিয়েছেন এক বোতল মধু, হাদিয়া। এতো স্বাদের, এতো ঘন মধু কমই পেয়েছি। সুজন ভাইয়ের ব্রান্ড তাসমান মধুর অনন্য বৈশিষ্ট হলো উনি নিজে সরাসরি সুন্দরবনে চলে যান মৌয়াল টিম নিয়ে, যার প্রমাণ পাবেন ওনার ভিডিওগুলোতে।

ভেজালের কারণে একটা সময় মধু খাওয়া প্রায় ছেড়ে দিয়েছিলাম বললেই চলে। সুজন ভাইদের মতো মানুষদের এই পেশায় আশার কারণে অসাধারণ এই খাবারটির পূর্ণ রস আস্বাদন করতে পারছি, আলহামদুলিল্লাহ। আল্লাহ, এই ভাইদের চেষ্টায় বারাকাহ দান করুন, আমিন।

Categories
রিভিউ

শান্তু ভাইয়ের আই ক্লিক বাজার

আগে কোন জিনিস বিশেষ করে ইলেকট্রনিকস জিনিস কিনলে দোকানদার জিজ্ঞেস করতো, এক নম্বর নিবেন না দুই নম্বর। কিন্তু এখন এই দুই নম্বরেরই যে কত নম্বর বের হয়েছে দোকানদার বেচারা নিজেও বলতে পারে না। বাধ্য হয়ে এখন সব জিনিসকেই ‘একের মাল’ বলে চালিয়ে দেয়ার চল শুরু হয়েছে।

আমার কাছে মনে হয় এখন ইলেকট্রনিকস জিনিস কিনলে প্রতারিত হবার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশী। অনলাইন থেকে কিনলেও শান্তি নাই। বিভিন্ন মার্কেটপ্লেস থেকে গ্যাজেট কিনতে গেলে মোবাইলের বদলে আলু, পেয়াজ (দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে এখন উল্টোটা হবারও চান্স আছে, পেয়াজ অর্ডার করলেন, মোবাইল পাঠায় দিয়ে ধাপ্পা দিলো) পাওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায়। বিশাল ক্যাশব্যাকে পানির দরে গ্যাজেট কিনলে রয়েছে অচল, স্টক-লটের রদ্দি মাল পাওয়ার সম্ভাবনা!

সব মিলিয়ে গ্যাজেট কেনা এখন কঠিনতম কাজগুলোর একটি। তবে Hasan Shariful Islam Shantu ভাই I click Bazar এর মাধ্যমে এই কাজটা কিছুটা সহজ করে দিয়েছেন। যেকোন গ্যাজেট দরকার হলে প্রথম কাজ হলো শান্তু ভাইকে ফোন দেয়া, ভাই এইটা লাগবে। উনি দিতে না পারলে দেন অন্য জায়গায় খোজ নেয়া। ভাইয়ের বিশেষত্ব হলো উনি কয়েকদিন পর পর নিজে চলে যান চায়নায় এবং সরাসরি নিজে যাচাই বাছাই করে নিয়ে আসেন সত্যিকারের ‘একের মাল’। ওনার রয়েছে অত্যাধুনিক সব গ্যাজেটের বিপুল কালেকশন। মিরপুর ডিওএইচএসে ওনার অফিস অথবা মোতালেব প্লাজায় ওনার শোরুমে গেলে যুগের চেয়ে এগিয়ে যাওয়া যায় প্রায় ছয়মাস। মাথা ঘুরিয়ে দেয়ার মতো সব টেকনোলজিতে ঠাসা।

গ্যাজেটের জন্য আমার মতো আপনারও হতে পারে শান্তু ভাই আশা ভরসার স্থল। নিশ্চিন্তে তার কাছ থেকে কিনতে পারেন গ্যাজেট। আশা করি ঠকবেন না।

ছবিতে তার কাছ থেকে সদ্য কেনা একটি পাওয়ার ব্যাংক ও একজোড়া কর্ডলেস হেডফোন। আল্লাহ ভাইয়ের ব্যবসায় বারাকাহ দান করুন।

Categories
রিভিউ

ইবাদাহের পিনাট বাটার

যারা রাত জাগা পাখি, তাদের মেদভুড়ির জন্য অন্যতম দায়ী ‘মিডনাইট স্নাক্স’গুলো। গভীর রাতে ফ্রিজ খুলে মিষ্টি, চানাচুর, জ্যাম, জেলি, ব্রেড- এইগুলো মুখের জন্য খুব স্বাদের হলেও ভূড়ির জন্য খুব খারাপ। তবে এইগুলোর মধ্যে একটা ভালো স্নাক্স আছে, পিনাট বাটার। খুবই মজার এই পিনাট বাটার পেটের জন্যও ভালো জিহবার জন্যও ভালো। এখনতো কিটোর হাইপ চলছে, যারা কিটো করছেন, তাদের জন্য পিনাট বাটার খুবই রিকমেন্ডেড একটি খাবার।

তবে অসুবিধা হলো এই পিনাট বাটারগুলোর দাম অনেক বেশী। বাজারে পাওয়া বাটারগুলোর সবগুলোই ইম্পোর্টেড। বিদেশী জিনিসের দাম বেশী হবে এটাই স্বাভাবিক। আশার কথা হলো আমাদেরই পরিচিত ভাইরা এই বাটার বানানোর ট্রাই করছে, এবং ইতোমধ্যে বাজারে এনে ফেলেছে। একটা ফোন দিলেই একদম বাসায় পৌছে দিবে। বলছিলাম ইবাদাহ’র কথা। (লিংক কমেন্টে) বেশ কিছুদিন ধরে তারা এরকম এক্সপেরিমেন্টাল ফুড নিয়ে কাজ করছে। তাদের রসুনের আচারটা আমার খুবই প্রিয়। এবার তারা আনলো পিনাট বাটার। তাদের অন্যান্য প্রোডাক্টের মতো এই পিনাট বাটারও আপনার মন ভরিয়ে দিবে, আশা করা যায়।

Categories
রিভিউ

মাতৃভান্ডারের রসমালাই ও রিয়েল ফুড

শুক্রবার সকালে বেলা করে ঘুম থেকে উঠে বউ বাচ্চার সাথে সময় কাটাচ্ছেন, এমন সময় ফোন, “স্যার আপনার একটা অর্ডার ছিল, মাতৃভান্ডারের রসমালাই নিয়ে আমি আপনার গেটে।” এরপর রসমালাই নামের সেই অমৃত একটার পর একটা গলাধঃকরণ পরিবারের সবাই মিলে। একটি ছুটির দিনের সকাল এরচেয়ে মধুর আর কিভাবে হতে পারে!

সকালটাকে মধুর করার পেছনের মানুষটা প্রিয় বড়ভাই Dehlobi Rezaul ভাই এবং তার উদ্যোগ ‘রিয়াল ফুড’। শুনেছি কুমিল্লায় মাতৃভান্ডার থেকে রসমালাই নিতে ১-২ ঘন্টা সময় ব্যয় করতে হয়, সেই জিনিস একদম দরজার গোড়ায়। ডেলিভারিও পেয়েছি খুবই দ্রুত। ভাইয়ের পোষ্ট দেখে রাত ১২টায় অর্ডার দিয়ে সকাল ১১টার মধ্যে ডেলিভারি। এতো সুপারফাষ্ট ডেলিভারি চালডাল ছাড়া পেয়েছি বলে মনে পড়ে না।

দেহলভি ভাই খুব আমুদে ও ঘোরাঘুরির মানুষ। ঘোরাঘুরিটাকেই নেশা থেকে পেশা বানিয়ে ফেললেন একটা ট্যুর অপারেটরস দিয়ে। সেখান থেকেই এখন কাজ করছেন বিভিন্ন জায়গার অথেনটিক ও ঐতিহ্যবাহী ফুড নিয়ে। কুমিল্লার রসমালাই, বগুড়ার দই, পাহাড়ের ফল, মোরগ- এরকম অনেক কিছু রয়েছে তার ভান্ডারে। আমার মাথায়ও ব্যবসার পোকাটা ঢুকেছিলো এরকম ঘোরাঘুরি থেকেই। বিভিন্ন জায়গায় যেতাম আর সেখানকার লোকাল, বিখ্যাত জিনিস দেখে ভাবতাম, ইস এই জিনিস যদি ঢাকায় নিয়ে বেচা যেত! ঠিক একাজটিই করছেন দেহলভি ভাই। ট্যুর অপারেটরের কারণে দেশব্যাপী রয়েছে তার বিস্তৃত নেটওয়ার্ক, এখন থেকে কোন জিনিস খেতে মন চাইলেই দেহলভি ভাইকে ফোন দিতে হবে, সাথে সাথে জিনিস হবে হাজির।

নেশাকে পেশা বানানোর সুযোগ খুব কম লোকই পেয়ে থাকে, দেহলভি ভাই তাদেরই একজন। আশা করি নেশা ও পেশার এই সংমিশ্রণে ভাই অনেক বড় কিছু করবেন। ভাইয়ের জন্য শুভকামনা।

Categories
রিভিউ

অর্গানিক ব্রয়লার চিকেন

আমি মনে করি ব্রয়লার মুরগী আমাদের এই ভূখন্ডের প্রতি আল্লাহর এক অশেষ নিয়ামত। এতো কম টাকায় এতো বিপুল প্রাণীজ প্রোটিনের উৎস দ্বিতীয়টি আর কি হতে পারে। অসুখ-বিসুখ, স্লথ বেড়ে উঠা, অধিক দাম, উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় খোলা জায়গার অভাব- আরও অনেক কারণে দেশী মুরগী এফোর্ট করা অনেকের জন্যই কষ্টসাধ্য। এর প্রতিস্থাপক হিসেবে আল্লাহ ব্রয়লার মুরগী পাঠিয়েছেন। খেতে সুস্বাদু (অনেকেই দ্বিমত করতে পারেন), মাংসল, উৎপাদনে সময় কম লাগে, জায়গা কম লাগে, সহজপ্রাপ্য এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যেটা দামে সস্তা। এদেশের বিপুল সংখ্যক শ্রমজীবী মানুষের প্রধানতম অনেক ক্ষেত্রে একমাত্র প্রাণীজ প্রোটিনের উৎস এই ব্রয়লার মুরগী। কিন্তু আমাদের বেনিয়া ও সুবিধাবাদী মনোভাব আল্লাহর এই নিয়ামতকে বিষে পরিণত করতে দেরী করিনি। এন্টিবায়োটিক, ট্যানারির বর্জ্য, জন্মনিরোধক পিল- হেন কোন জিনিস নাই যেটা এই অবলা প্রানীটিকে খাওয়াতে বাকি রেখেছি। ফলত আমার মতো অনেকেই এই মুরগী থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিলো, নিয়েছে। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু ভাইয়ের সাথে সখ্যতার দরুণ খোজ পেয়ে যাই সেফ ব্রয়লারের। তাদের কিছু ভাই-ব্রাদার, নিজস্ব গবেষণা, শিক্ষকদের সহযোগিতা ও উদ্ভাবনী দক্ষতায় নিজেরাই ব্রয়লার মুরগীর কিছু নিরাপদ ঔষধ ও ফিডের ফর্মুলা জেনারেট করেছে। সেখান থেকেই বিগত বেশ কিছুদিন ধরে আমি, আমার কলিগ ও বন্ধুবান্ধবরা মিলে মুরগী সংগ্রহ করছি। আমার ও অন্যান্য ব্যবহারকারীদের মতামতের ভিত্তিতে এই মুরগী নিয়ে কিছু পর্যবেক্ষণ বা ফিডব্যাক তুলে ধরছিঃ

১) এপর্যন্ত এ মুরগীর প্রায় শতভাগ রিপিট পারচেজ পেয়েছি। যারা একবার এই মুরগী কিনেছে, তাদের প্রায় সবাই পুনরায় অর্ডার দিয়েছে। প্রোডাক্ট ভালো হওয়ার অন্যতম বড় ইন্ডিকেশন হলো রিপিট পারচেজ।

২) বাজারের টিপিকাল ব্রয়লারের চেয়ে এই মুরগীর স্বাদ অনেক অনেক বেটার। বাজারের মুরগীর মাংসগুলো ফাঁপা ফাঁপা থাকে, পক্ষান্তরে এই মুরগীর মাংসগুলো অনেক সলিড। বাজারের মুরগীগুলো কি এক অষুধের প্রভাবে সারাদিন পানি খেতে থাকে, মাংসগুলো ফাঁপা হওয়ার এটা একটা বড় কারণ।

৩) সেফ ব্রয়লারগুলোকে ন্যাচারালি বড় হওয়ার সুযোগ দেয়া হয়। এর হার্ভেষ্টিং টাইম বাজারের মুরগীর চেয়ে অনেক বেশি। হাবিজাবি ঔষধ খাইয়ে বাজারের মুরগীগুলো যেখানে সাধারণত ২৮-৩০ দিনে হার্ভেষ্ট করা হয়, এমুরগীর হার্ভেষ্টিং টাইম, ৪০-৫০ দিন। ন্যাচারালি বড় হওয়ার সুযোগ দেয়া হয়। অবশ্য একারণে প্রাইস কিছুটা বেড়ে যায়। কিন্তু এবাড়তি দাম অন্যদিক দিয়ে পুষিয়ে যায়।

৪) একসময় আমার কাছে ব্রয়লার মুরগীর প্রিয় অংশ ছিলো এর নরম হাড়। কিন্তু যখন শুনলাম, একে খাওয়ানো এন্টিবায়োটিক রেসিডিউ মূলত হাড়ে চলে আসে, তখন থেকেই হাড় খাওয়া বন্ধ। কিন্তু এখন নির্দ্বিধায় সেফ ব্রয়লারের হাড় খেতে পারছি ইচ্ছেমতো।

৫) দাম কিছুটা বেশী- স্বপ্ন, আগোরাতে যে মুরগীগুলো আফটার ড্রেসিং ২৮০-২৯০ টাকায় বিক্রি হয়, সেখানে এটার দাম ৩২০ টাকা। কেজিতে ৩০ টাকার মতো বেশি। দাম বেশি হওয়ার কারণগুলো উল্লেখ করেছি উপরেই। হার্ভেষ্টিং টাইম অনেক বেশী। অন্যরা যেখানে বছরে ১১-১২টা চালান উঠাতে পারে, এই মুরগীর চালান উঠে ৭-৮ টা। ফিডের দাম পড়ে যায় বেশী, ঔষধের দাম পড়ে বেশী। কিন্তু আপনি যে আউটপুট পাবেন সেটা কিন্তু এই ৩০-৪০ টাকার চেয়ে অনেক বেশী। মুখে স্বাদ পাবেন, মাংসগুলো অনেক সলিড, হাড় খেতে পারবেন নিশ্চিন্তে, ডাক্তারের খরচ কমাবে- সেদিক থেকে সস্তা।

প্রাপ্তিস্থান: বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান সেফ ব্রয়লারের পণ্য বাজারজাতকরণের কাজে যুক্ত রয়েছে। ঢাকার মধ্যে হোম ডেলিভারি পেতে যোগাযোগ করতে পারেন আহলান প্রোডাক্টস এর সাথে। তাদের যোগাযোগের নম্বর: 01757-031-440

রাত যত গভীর হবে ভোর হবার সম্ভাবনা তত বেড়ে যায়। চারদিকে ভেজালের মহাস্রোতের ভিড়ে বিশুদ্ধ খাবারের ছোট ছোট এই প্রচেষ্টাগুলো দিন দিন বেড়ে উঠছে। আমাদের কাজ হবে, যতভাবে সম্ভব এই প্রচেষ্টার সাথে সামিল হওয়া- প্রোডাক্ট কিনে হোক, পরামর্শ দিয়ে হোক। আমরা যত কিনবো এই প্রোডাক্টগুলোর উৎপাদন দক্ষতা তত বাড়বে, কলেবর তত বড় হবে, আমরাও দামে কম পাবো। গতানুগতিকতার বাইরে গিয়ে আমাদের ভালো খাওয়ানোর জন্য যারা এই প্রচেষ্টাগুলো চালিয়ে যাচ্ছে, আল্লাহ তাদের চেষ্টায় বারাকাহ দান করুন। আমিন।