আমি মনে করি ব্রয়লার মুরগী আমাদের এই ভূখন্ডের প্রতি আল্লাহর এক অশেষ নিয়ামত। এতো কম টাকায় এতো বিপুল প্রাণীজ প্রোটিনের উৎস দ্বিতীয়টি আর কি হতে পারে। অসুখ-বিসুখ, স্লথ বেড়ে উঠা, অধিক দাম, উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় খোলা জায়গার অভাব- আরও অনেক কারণে দেশী মুরগী এফোর্ট করা অনেকের জন্যই কষ্টসাধ্য। এর প্রতিস্থাপক হিসেবে আল্লাহ ব্রয়লার মুরগী পাঠিয়েছেন। খেতে সুস্বাদু (অনেকেই দ্বিমত করতে পারেন), মাংসল, উৎপাদনে সময় কম লাগে, জায়গা কম লাগে, সহজপ্রাপ্য এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যেটা দামে সস্তা। এদেশের বিপুল সংখ্যক শ্রমজীবী মানুষের প্রধানতম অনেক ক্ষেত্রে একমাত্র প্রাণীজ প্রোটিনের উৎস এই ব্রয়লার মুরগী। কিন্তু আমাদের বেনিয়া ও সুবিধাবাদী মনোভাব আল্লাহর এই নিয়ামতকে বিষে পরিণত করতে দেরী করিনি। এন্টিবায়োটিক, ট্যানারির বর্জ্য, জন্মনিরোধক পিল- হেন কোন জিনিস নাই যেটা এই অবলা প্রানীটিকে খাওয়াতে বাকি রেখেছি। ফলত আমার মতো অনেকেই এই মুরগী থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিলো, নিয়েছে। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু ভাইয়ের সাথে সখ্যতার দরুণ খোজ পেয়ে যাই সেফ ব্রয়লারের। তাদের কিছু ভাই-ব্রাদার, নিজস্ব গবেষণা, শিক্ষকদের সহযোগিতা ও উদ্ভাবনী দক্ষতায় নিজেরাই ব্রয়লার মুরগীর কিছু নিরাপদ ঔষধ ও ফিডের ফর্মুলা জেনারেট করেছে। সেখান থেকেই বিগত বেশ কিছুদিন ধরে আমি, আমার কলিগ ও বন্ধুবান্ধবরা মিলে মুরগী সংগ্রহ করছি। আমার ও অন্যান্য ব্যবহারকারীদের মতামতের ভিত্তিতে এই মুরগী নিয়ে কিছু পর্যবেক্ষণ বা ফিডব্যাক তুলে ধরছিঃ
১) এপর্যন্ত এ মুরগীর প্রায় শতভাগ রিপিট পারচেজ পেয়েছি। যারা একবার এই মুরগী কিনেছে, তাদের প্রায় সবাই পুনরায় অর্ডার দিয়েছে। প্রোডাক্ট ভালো হওয়ার অন্যতম বড় ইন্ডিকেশন হলো রিপিট পারচেজ।
২) বাজারের টিপিকাল ব্রয়লারের চেয়ে এই মুরগীর স্বাদ অনেক অনেক বেটার। বাজারের মুরগীর মাংসগুলো ফাঁপা ফাঁপা থাকে, পক্ষান্তরে এই মুরগীর মাংসগুলো অনেক সলিড। বাজারের মুরগীগুলো কি এক অষুধের প্রভাবে সারাদিন পানি খেতে থাকে, মাংসগুলো ফাঁপা হওয়ার এটা একটা বড় কারণ।
৩) সেফ ব্রয়লারগুলোকে ন্যাচারালি বড় হওয়ার সুযোগ দেয়া হয়। এর হার্ভেষ্টিং টাইম বাজারের মুরগীর চেয়ে অনেক বেশি। হাবিজাবি ঔষধ খাইয়ে বাজারের মুরগীগুলো যেখানে সাধারণত ২৮-৩০ দিনে হার্ভেষ্ট করা হয়, এমুরগীর হার্ভেষ্টিং টাইম, ৪০-৫০ দিন। ন্যাচারালি বড় হওয়ার সুযোগ দেয়া হয়। অবশ্য একারণে প্রাইস কিছুটা বেড়ে যায়। কিন্তু এবাড়তি দাম অন্যদিক দিয়ে পুষিয়ে যায়।
৪) একসময় আমার কাছে ব্রয়লার মুরগীর প্রিয় অংশ ছিলো এর নরম হাড়। কিন্তু যখন শুনলাম, একে খাওয়ানো এন্টিবায়োটিক রেসিডিউ মূলত হাড়ে চলে আসে, তখন থেকেই হাড় খাওয়া বন্ধ। কিন্তু এখন নির্দ্বিধায় সেফ ব্রয়লারের হাড় খেতে পারছি ইচ্ছেমতো।
৫) দাম কিছুটা বেশী- স্বপ্ন, আগোরাতে যে মুরগীগুলো আফটার ড্রেসিং ২৮০-২৯০ টাকায় বিক্রি হয়, সেখানে এটার দাম ৩২০ টাকা। কেজিতে ৩০ টাকার মতো বেশি। দাম বেশি হওয়ার কারণগুলো উল্লেখ করেছি উপরেই। হার্ভেষ্টিং টাইম অনেক বেশী। অন্যরা যেখানে বছরে ১১-১২টা চালান উঠাতে পারে, এই মুরগীর চালান উঠে ৭-৮ টা। ফিডের দাম পড়ে যায় বেশী, ঔষধের দাম পড়ে বেশী। কিন্তু আপনি যে আউটপুট পাবেন সেটা কিন্তু এই ৩০-৪০ টাকার চেয়ে অনেক বেশী। মুখে স্বাদ পাবেন, মাংসগুলো অনেক সলিড, হাড় খেতে পারবেন নিশ্চিন্তে, ডাক্তারের খরচ কমাবে- সেদিক থেকে সস্তা।
প্রাপ্তিস্থান: বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান সেফ ব্রয়লারের পণ্য বাজারজাতকরণের কাজে যুক্ত রয়েছে। ঢাকার মধ্যে হোম ডেলিভারি পেতে যোগাযোগ করতে পারেন আহলান প্রোডাক্টস এর সাথে। তাদের যোগাযোগের নম্বর: 01757-031-440
রাত যত গভীর হবে ভোর হবার সম্ভাবনা তত বেড়ে যায়। চারদিকে ভেজালের মহাস্রোতের ভিড়ে বিশুদ্ধ খাবারের ছোট ছোট এই প্রচেষ্টাগুলো দিন দিন বেড়ে উঠছে। আমাদের কাজ হবে, যতভাবে সম্ভব এই প্রচেষ্টার সাথে সামিল হওয়া- প্রোডাক্ট কিনে হোক, পরামর্শ দিয়ে হোক। আমরা যত কিনবো এই প্রোডাক্টগুলোর উৎপাদন দক্ষতা তত বাড়বে, কলেবর তত বড় হবে, আমরাও দামে কম পাবো। গতানুগতিকতার বাইরে গিয়ে আমাদের ভালো খাওয়ানোর জন্য যারা এই প্রচেষ্টাগুলো চালিয়ে যাচ্ছে, আল্লাহ তাদের চেষ্টায় বারাকাহ দান করুন। আমিন।