Categories
সাম্প্রতিক

সামনের দুই সপ্তাহ ভয়ংকর

কেউ কি আমাকে বলবেন করোনার এই “সামনের দুই সপ্তাহ ভয়ংকর” এইটা কবে শেষ হবে? সেই মধ্য মার্চ থেকে শুনে আসতেছি কথাটা!

মার্কেটিয়াররা বেশ কিছু ইমোশন নিয়ে প্রোডাক্ট বা সার্ভিস ক্যাম্পেইন করে, যেমন লাভ, সেক্সুয়্যালিটি, হিউমার ইত্যাদি। এর মধ্যে একটা হচ্ছে ফিয়ার মার্কেটিং। ভয় দেখিয়ে তাদের প্রোডাক্ট বা সার্ভিস কনজিউম করানো। কিছুদিন আগে এইরকম ক্যাম্পেইন ছিল অর্গানিক ফুড নিয়ে যেটা এখনো চলছে। বাজারের খাবারে ভেজাল, বীষ অমুক তমুক বলে নিজের প্রোডাক্টের দ্বিগুণ দামে মার্কেটিং করা।

এই কোভিড নিয়ে শুরু থেকেই চলছে ফিয়ার মার্কেটিং। সেই মধ্য মার্চ থেকে শুরু হইছে, ‘সামনের দুই সপ্তাহ খুব ভয়ংকর’।

কোভিড নিয়ে সবচেয়ে বেনিফিশিয়াল মেডিকেল সেক্টর। ডাক্তাররা রীতিমতো সোশ্যাল সেলিব্রেটি। আর্থিক দিক দিয়ে বেনিফিসিয়াল না হলেও তাদের অনেকেই (আই রিপিট “অ-নে-কে-ই”, সবাই না কিন্তু, সো ডাক্তার ভাইবোনদের নিজেদের গায়ে এটা টেনে নেয়ার দরকার নাই) চাচ্ছে এই ফিয়ার মঙ্গারিংটা থাকুক। এ কারণেই এই সামনের দুই সপ্তাহ শেষই হচ্ছে না। একেক সময় একেক গাউস কুতুব এসে বানী দিয়ে যাচ্ছে আমরা এখন পিকে আছি, দশ নম্বর বিপদ সংকেত!

এই যে ওরা ভবিষ্যৎ বানী করছে, কিসের ভিত্তিতে করছে, সামনের দুই সপ্তাহ ভয়ংকর। তাদের কাছে কী ডেটা আছে? আমরা এখন পিকে আছি না বটমে আছি কিভাবে জানলো তারা? কোভিড ন্যুইয়র্কে যে আচরণ করছে, বাংলাদেশে কি সেরকম করছে বা চায়নাতে বা তুরস্কে? কোন ডেটার বলে তারা বলছেন সামনের ভয়ংকর দু সপ্তাহ। এব্যাপারে আমার নলেজ আর তার নলেজ তো একই রকম, দুজনই অন্ধকারে! হুদাই দুই সপ্তাহ দুই সপ্তাহ ধরে চিল্লাইতেছে সেই আড়াই মাস ধরে!

লক ডাউন তো ট্রিটমেন্ট না। লক ডাউন দিয়ে কি আপনি কোভিড ভালো করে ফেলবেন? কতদিন চালাবেন লক ডাউন ছয়মাস, একবছর, দুইবছর। এখন তো বলছেন কোভিড নিয়েই আমাদের সামনে চলতে হবে। আর প্রোপার ওয়েতে তো লক ডাউন করতেও পারছেন না। খামাখা আর এইসব বলে গরীব মারার ইন্ধন জোগাইয়েন না।

Categories
সাম্প্রতিক

করোনাত্তোর পৃথিবী

“২য় বিশ্বযুদ্ধত্তোর”, “মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী” এরকম বেশ কিছু ফ্রেজ শুনে আসছি ছোটবেলা থেকে। আমাদের শব্দভান্ডারে সম্ভবত আরেকটি ফ্রেজ যুক্ত হতে যাচ্ছে- “করোনাত্তোর পৃথিবী”। কিছু কিছু ঘটনা ইতিহাসের বাঁক পরিবর্তন করে দেয়, পুরনোকে ভেঙ্গে তছনছ করে দেয়, সবকিছু গড়ে তোলে আবার নতুন করে। আমাদের জীবদ্দশায় আমরা এরকম একটি যুগান্তকারী ঘটনার সম্মুখীন। ২০২০ সালের মার্চ মাসের আগের পৃথিবী আর পরের পৃথিবী একরকম হবে না কখনই। কেমন হবে সে পৃথিবী? আমরা কি পারবো শিক্ষা নিতে এ ঘটনা থেকে? পাপ-পঙ্কিলতা, বিলাসিতার চোরাবালি থেকে কি বেরুতে পারবো?

প্রাত্যহিক জীবনে পরিবর্তন আসুক না আসুক ব্যবসায়িক বিশ্বে পরিবর্তনের আঘাত অনিবার্য। ব্যবসায়ীরা হলো ‘উপকূলীয় সবুজ বেষ্টনী’। ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস, সাইক্লোন- প্রথম আঘাতটা বুকে পেতে নিয়ে উপকূলীয় মানুষগুলোকে যেমন রক্ষা করে সবুজ গাছগাছালি, যেকোন বিপর্যয়ের প্রথম আঘাতটা আসে ব্যবসায়ীদের উপর। তারাও নিজের অশ্রু, পরিশ্রম আর অর্থের বিনিময়ে চেষ্টা করবে ব্যবসায়ীক ইকোসিস্টেমটাকে টিকিয়ে রাখতে! কত যে ব্যবসা ধ্বংস হবে, কত যে ব্যবসায়ী পথে বসবে এই করোনাকান্ডে তার ইয়ত্তা নেই। ব্যবসায়ীদের আর্থিক লোকসান, চোখের পানি, শরীরের ঘামের উপর নির্মিত হবে আবারও সভ্যতা।

দ্বিতীয় আঘাতটা আসতে যাচ্ছে দেশের কর্মসংস্থানের উপর। এই মুহুর্তে যারা চাকরি খুঁজছেন বা জব মার্কেটে ঢুকতে যাচ্ছেন, খুব খুব কঠিন সময় অপেক্ষা করছে তাদের জন্য। এবারের এই ঘটনার সবচেয়ে বড় ইম্প্যাক্ট হলো পুরো পৃথিবী একসাথে আঘাতপ্রাপ্ত হলো। আপনি যে বিদেশ যাবেন কর্মসংস্থানের জন্য বা ফ্রিল্যান্সিং করবেন, সে উপায়ও বন্ধ। তাদের নিজেদের অবস্থাই তো খারাপ আমাদের মতো। এছাড়াও পুরনো অনেক পেশা, অনেক স্কিল এখন আর কাজে লাগবে না। মানুষের পারচেজিং পাওয়ার আবার আগের অবস্থানে ফিরে আসতে বেশ লম্বা একটা সময় লাগবে। এসময়ে অনেক ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাবে, ধরণ পরিবর্তন হবে। সো নতুন পেশা, নতুন পৃথিবীর জন্য নতুন স্কিলের দরকার হবে।

যাইহোক হতাশ হওয়ার কিছু নেই। আল্লাহ ওষুধ ছাড়া যেমন কোন রোগ দেন না, তেমনি রিজক ছাড়াও মানুষ পাঠান না। আমাদের রিজক নির্দিষ্ট। যতটুকু পাওয়ার সেটা আসবেই। এখন থেকেই নিজেকে শারিরীক ও মানসিকভাবে প্রস্তুত করি নতুন পৃথিবীর জন্য। আল্লাহ যেন আমাদের সবাইকে ধৈর্য্য ধারণ করার তৌফিক দান করেন এবং খুব দ্রুত এই ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার তৌফিক দান করেন। আমিন