মাঝখানে একটা ট্রল খুব দেখা যেত, “ছেলে কি করে, ‘বিদেশে থাকে’।” যেখানে দেশে থাকা পাত্রের চাকরী নিয়ে, ক্যারিয়ার নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ চলে, পক্ষান্তরে পাত্র বিদেশ থাকলেই যেন ষোল আনা উসুল। বিদেশে থাকাই পাত্রের একমাত্র যোগ্যতা, সে সেখানকার ওসি না ডিসি সেগুলো বিবেচ্য নয়।
ওসি, ডিসির কাজ করা বা বিদেশে যেয়ে অড জব করার কোন সমালোচনা আমি করছি না বরং তার উল্টোটা। এদেশেই যখন কেউ এধরণের কাজ করতে যায়, আমরা সমালোচনার তুবড়ি ছোটাই, রে রে বলে তেড়ে আসি, চারদিকে জাত গেলো জাত গেলো শোড়গোল। যে করে তার চেয়ে লজ্জা যেন তার আশেপাশের লোকজনের বেশী। নিজে তো করবেই না বরং কেউ লজ্জার বাধ ভেঙ্গে যখন এগিয়ে আসে, পিয়ার প্রেশারে গুটিয়ে যেতে বাধ্য হয়।
কোভিড ক্রাইসিস সব ভেঙ্গেচূড়ে দিচ্ছে। ব্যবসা বানিজ্য, চাকরি – বাকরি ; সব। বিসিএসের পড়া পড়ে আর লাভ নাই, কবে যে সার্কুলার হবে তার নাই ঠিক। ব্যাংকগুলা লোক নেয়া তো দূরের কথা ছাটাই করা শুরু করবে, এমএনসি, এফএমসিজি সব জায়গায় একই অবস্থা হতে যাচ্ছে। এই অচলাবস্থার শেষ কোথায় কেউ জানে না।
কোভিড যেভাবে সব ভেঙ্গে দিচ্ছে, সেভাবে যেন আমাদের অন্তরের ইগো, মিথ্যে অহমিকা এগুলোও যেন ভেঙ্গে দেয়। একজন যুবক পাশ করার পর ৭-৮ বছর চাকরির পড়া পড়ে বৃদ্ধ বাপের কাছ থেকে টাকা নিতে লজ্জা নেই, প্রতিদিন ৩-৪ ঘন্টা রিক্সা চালিয়ে ৫-৬ শ টাকা ইনকাম করা লজ্জা। নিজের লকবে বেকার টাইটেল লাগাতে লজ্জা নেই, সব লজ্জা একটা ভ্যানে করে বা ফুটপাতে কিছু প্রোডাক্ট বেচে হালালভাবে দুটো টাকা ইনকাম করতে।
অনেক বছর আগে দোকানের ম্যানেজারের জন্য ফেসবুকে এ্যাড দেয়ার পর বিবিএ করা একটা ছেলে এসেছিল চাকরীর জন্য। তাকে মার্কেটের বাইরে কার্টে কোল্ড কফি বিক্রেতাকে দেখিয়ে বলেছিলাম এর ইনকাম মাসে ত্রিশ হাজারের বেশী, ওই যে কলাওয়ালা সে-ও বিশের নীচে কামায় না। এইসব চাকরী না করে কোন ব্যবসার ধান্দা করেন। আপনি শিক্ষিত লোক, ছোট দিয়ে শুরু করলেও ওদের চেয়ে ভালো করতে পারবেন।


জানি ফেসবুকে এইসব বড় বড় কথা বলা অনেক সহজ, কিন্তু বাস্তবে কাজে ফলানো অনেক কঠিন। তাই ছবি দুটো দিলাম দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য। জোশ গিয়ারের শোরুমের সামনে আমরা ফুটপাথে কোভিড রেসপন্স প্রোডাক্ট নিয়ে নেমেছি। আলহামদুলিল্লাহ আল্লাহ অন্তর থেকে এইসব মেকি ইগো আস্তে আস্তে দূর করে দিচ্ছেন। গত কয়েকদিনে এ পর্যন্ত প্রায় ২০+ ডেলিভারি নিজ হাতে করেছি, আজকেও একটা দিয়ে আসলাম।
ছবি দুটো দিলাম নতুনদের উৎসাহ দেবার জন্য, আইস ব্রেকিং এর জন্য। আপনি বসে থাকলে কেউ এসে দশটাকা দিবে না, আপনি মাঠে নামলে তীর্যক কথা বলা লোকগুলো আপনার অসহায়ত্বের সময় পাশে দাড়াবে না। কাদের ভয়ে আপনি নামছেন না। আপনার জীবন আপনাকেই ডিসিশন নিতে হতে হবে। ‘পাশের বাড়ির আন্টি’ তীর্যক কথা ছাড়া আর কোন উপকার বা অপকার করতে পারবে না। সো তাদেরকে আর কতো পাত্তা দিয়ে নিজের জীবনটাকে নষ্ট করে দিবেন?
আল্লাহ আমাদের হালালভাবে রুজি অর্জনের তৌফিক দান করুন। আমিন