শুরুটা করেছিলো সিয়ান। এদেশের ইসলামী সাহিত্য নিয়ে ছিলো বিস্তর অভিযোগ। প্রিন্ট কোয়ালিটি খারাপ, বাঁধাই খারাপ, কন্টেন্ট পড়ার মতো না, লেখকদের ঠিকমতো পারিশ্রমিক না দেয়া- এরকম অংখ্য অভিযোগের ভান্ডার ছিলো তাদের বিরুদ্ধে। একদল উদীয়মান, শক্তিশালী লেখক, সংগঠকের হাত ধরে যাত্রা শুরু করে সিয়ান। ঝকঝকে প্রিন্ট, অসাধারণ কাগজ, শক্তিশালী বাঁধাই, অনন্য সাধারণ কন্টেন্ট, লেখক-প্রকাশক সুসম্পর্ক- এরকম অসংখ্য প্রতিশ্রুতি নিয়ে সামনে আসে সিয়ান। দেশের ইসলামী সাহিত্যের অঙ্গনে একরকম বিপ্লব শুরু করে তারা। সিয়ান কর্তৃক যে বীজটি বোপিত হয়েছিলো, তা এখন বলা চলে মহীরুহ বৃক্ষে পরিণত হয়েছে। ইসলামী বই মানেই যেমন অন্তরের শান্তি, সাথে চোখেরও প্রশান্তি। কি বাঁধাই, কি প্রিন্ট, কি কন্টেন্ট সবজায়গায় বিপ্লবের ছোঁয়া।
ছোটবেলা থেকেই শুনে এসেছি, ইসলামী লোকজন প্রতিক্রিয়াশীল, অন্ধ, যুক্তি মানে না, বিজ্ঞানবিমুখ। আল্লাহর কি শান, এই এক জীবনেই পাশার দানটা পুরো উল্টে যাওয়ার সাক্ষি করে দিলেন। যে লোকগুলো আজীবন মুক্তচিন্তা, মুক্তবুদ্ধি, বিজ্ঞানচর্চার মন্ত্র জপেছে তারাই আজ বলছে, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, সাইনটিস্ট হলেই বিজ্ঞানমনস্ক হওয়া যায় না, মুক্তচিন্তা, মুক্তবুদ্ধির ধারক এই লোকগুলোকে দেখেছি কিভাবে আরিফ আজাদের বইকে নিষিদ্ধ করা যায় সেই পায়তারা করতে। এরাই একসময় আমাদের শিখিয়েছে, কলমের জবাব কলম দিয়ে দিতে, লেখার জবাব লেখা দিয়ে। এখনতো কলম আর লেখার স্রোতে ধুতি খুলে যায় অবস্থা। তাই নিয়েছে ভিন্নপথ, যার অভিযোগ তারা অন্যদের বিরুদ্ধে তুলতো এতোদিন।
খবর পুরনো, গতবছরের মতো এবছরও কোন ইসলামী প্রকাশনিকে বইমেলায় স্থান দেয়া হয় নি। রকমারীর বেষ্ট সেলার প্রকাশনা ‘সমকালীন’, ‘গার্ডিয়ান’ এবারও ‘ভাড়া বেচে খাওয়া’ প্রকাশনীর স্টলে জায়গা করে নিয়েছে। আরিফ আজাদের বইকে চট্টগ্রাম বইমেলায় ঢুকতে দেয়া হয় নি।
পিনাকি দা একবার বলেছিলেন, সেক্যুলার রাইটাররা যেখানে চিন্তায় পড়ে যায় এবার কি ২০০ কপি ছাপাবে নাকি ৩০০, সেখানে যেকোন ইসলামী বইয়ের প্রকাশনা শুরুই হয় ৫০০০ কপি দিয়ে!
কোন মাত্রায়ই এই মিসকিনগুলা আর ইসলামী বইয়ের সাথে তুলনার ধারে-কাছে নেই। মুদ্রণ কোয়ালিটি, বাধাই, কনটেন্ট, মুদ্রণ সংখ্যা, পাঠক সংখ্যা, আন্তর্জাতিক ব্যাপ্তি- যোজন যোজন এগিয়ে গেছে দেশের ইসলামী সাহিত্য এই ক’বছরে। বইমেলা /বাংলা একাডেমী যদি এই স্রোতের অনুকূলে পাল তুলতে না পারে, তবে সময়ই বলে দিবে তাদের গন্তব্য!